কুড়িগ্রামে পঞ্চম দফায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও এখনও দুর্ভোগ রয়েছে। বুধবার সকালে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টেও পানি বেড়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
এদিকে, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় চর ও দ্বীপচরের বানভাসী মানুষগুলোর দুর্ভোগ এখনও রয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে এসব মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। পাশাপাশি গোখাদ্যের সংকটও রয়েছে অনেক। এ বন্যায় জেলার ১৮ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেকেই ধার দেনা করে দ্বিতীয় দফা আমন আবাদ করলেও সেসব ফসল এখন বন্যায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি নেমে গেলে কিভাবে পরবর্তীতে আমন ধান চাষ করবেন তা তাদের জানা নেই।
সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের দছিমুদ্দিন গ্রামের এলাহি বকস জানান, আমাদের এলাকায় নদী ভাঙনে বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে আমাদের দ্বিতীয় বার কষ্ট করে আবাদ করা আমন ধান। নষ্ট হয়ে গেছে এসব তলিয়ে থাকা আমন ধান। আর আমাদের এসব আবাদ রক্ষা করা যাবে না। এছাড়াও রাজারহাট উপজেলার ১১০টি পুকুরের মাছসহ জেলায় ইতোমধ্যেই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪১০টি পুকুরের মাছ।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মৎসচাষী ফখরুল ইসলাম মন্ডল জানান, আমার আড়াই একর জমিতে অবস্থিত পাড়ামৌলা চন্দ্রপাড়া বিল বন্যার পানিতে তলিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে।
নাজিমখান ইউনিয়নের বাছরা বাজার এলাকার মৎসচাষী সাইফুল ইসলাম জানান, আমার ১১ একর জমির ওপর মৎস চাষের রেণু প্রকল্প তলিয়ে গিয়ে ৮ লাখ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে।
জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এ বন্যায় জেলার ৪১০টি পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯৪ লাখ টাকা। এদিকে, নদনদীর পানি কমতে শুরু করায় জেলার ৬৩টি পয়েন্টে নদীভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে রাজারহাট উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২০টি বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের পাটেশ্বরীর জগমনের চর এলাকায় গত এক সপ্তাহে আড়াই শতাধিক বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সদরের মোগলবাসায় দছিমুদ্দিন, হলোখানার শুভারকুটি, সারডোব, যাত্রাপুর, নাগেশ্বরীত ও উলিপুরের হাতিয়ায় নদী ভাঙন চলছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব এলাকায় শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কবরস্থান ও মসজিদ মন্দিরও রয়েছে হুমকিতে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে কাজ করলেও তা রক্ষা করতে পারছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার নদ-নদীর ৬৩টি পয়েন্টে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে। তবে মারাত্মক ঝুঁকিতে সদরের ভোগডাঙা এলাকায় ও তিস্তার কাসেম বাজার এলাকায় ভাঙন ঠেকানো কষ্টসাধ্য হচ্ছে। পানি কমে গেলে এটা স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে।
Leave a Reply